Sunday, December 13, 2015

স্বর্গীয় রমণীয় (৫)



গঙ্গা ছিল সেক্সবম্ব । সগ্গের সব দেবতারা হেডটারনার এই মেয়ের প্রেমে এক্কেরে ফিদা। সক্কলেই সে সময় ছুটেছিল গঙ্গাকে পাবার আশায়, একটু যদি তাকে ছুঁতে পারে অথবা একটু ফস্টিনষ্টি করতে পারে। মানে বেশী কিছু নয় দেবতারা নিজেদের দেবীদের ফাঁকি দিয়ে এক্সট্রা ভার্জিন মেয়ের সাথে পরকীয়া...এই আর কি। কিন্তু গঙ্গা নাছোড় কন্যে। সেক্সি হলেই কি সস্তা নাকি? অতএব মুখ বেঁকিয়ে সে চলে যেত কম্বুকন্ঠীর মত গ্রীবা হেলিয়ে। সগ্গে বসে বসে এট্টু মেয়েবাজি না করে সারাদিন যুদ্ধ আর অসুর ঠ্যাঙাতে কি ভাল্লাগে? তাই সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছোঁকছোঁকানি। ঐ মানে একটু ডাইভারশান। আর কিছুতো নেই সে মুলুকে। ইনটারনেট, কেবল, সেলফোন, ল্যাপটপ, এফ এম রেডিও। বরফের রাজ্যে সারাদিন যেন সফেদ সমাধিতে বসে থাকা আর গোঁফে তা দেওয়া, দাড়ি চুলকোনো আর জটার উকুনবাছা । এদিকে তেমনি এক সগ্গরাজ্যে বড় হচ্ছিল গঙ্গা। যেমন তার রূপ তেমনি তার চলন। যেমন তার লাবণ্য তেমনি সে গম্ভীর। ভাঙে তবু মচকায়না।
তুখোড় সব দেবতারা নাকানিচোবানি। তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গিয়ে আর পেলেম না টাইপ অবস্থা সকলের। এদিকে অযোধ্যার রাজা সগর তখন ভাবছেন অশ্বমেধ যজ্ঞটজ্ঞ করে সগ্গের দেবরাজ হবেন।
প্রথামত একটি অশ্বকে মন্ত্রপূত করে ইচ্ছাভ্রমণে ছেড়ে দিলেন । সে বচ্ছরান্তে ঘুরে ফিরলে অনুষ্ঠান, যাগযজ্ঞ ইত্যাদি হবে। সগর তাঁর ষাটহাজার পুত্রকে নিয়োগ করলেন অশ্বটির রক্ষকরূপে।
এদিকে দেবরাজ ইন্দ্রের মহাচিন্তা হল। তিনি ভাবলেন যদি এই অশ্বমেধ যজ্ঞের সফলতার কারণে সগরের মনস্কামনা পূর্ণ হয় তবে উনি স্বর্গ্যরাজ্য হারাতেও পারেন । তাই রাতারাতি অশ্বটিকে সবার অলখ্যে পাতালে সরিয়ে দিয়ে ঘোড়াচোরের আখ্যা পেলেন । পাতাল প্রদেশে সমুদ্রতটে আশ্রমে ধ্যানমগ্ন কপিলমুণির কাছাকাছি অশ্বটিকে বেঁধে রাখলেন ইন্দ্র।
সেযুগে স্বর্গ বলা হত উত্তরের উচ্চতর হিমালয়কে। মর্ত্য হল সমগ্র সমতট ভূমি আর্যাবর্ত আর পাতাল হল সমগ্র দক্ষিণের নিম্নভূমি । জল-জঙ্গলে পরিপূর্ণ, শ্বাপদসঙ্কুল, খাল-ডোবা-নালা আর সাপখোপের আখড়া এই দুর্গম পাতালরাজ্যটি ছিল সাধারণের অগম্য স্থান। স্বর্গ, মর্ত্যের সর্বত্র অশ্বটিকে খুঁজে না পেয়ে সগররাজার ষাটহাজার পুত্র পাতালে অনুসন্ধান কার্য চালাল। এক মুণির কুটিরের সমুখে অশ্বটিকে বাঁধা দেখতে পেয়ে তারা ভাবল এই মুণি‌ই বুঝি অশ্বচোর। তাদের প্রশ্নে, কোলাহলে ধ্যানম্গ্ন কপিলমুণি ক্রোধের বশে সগরের ষাটহাজার পুত্র ভস্মীভূত হল ।
এবার যজ্ঞের ঘোড়া ফিরে না আসায় সগরের খোঁজ শুরু। ভাইয়ের পুত্র অংশুমানকে পাঠালেন সন্ধান করতে। অংশুমান ঘুরতে ঘুরতে কপিলের আশ্রমে দেখলেন যজ্ঞের ঘোড়াটিকে। কপিল জানালেন অংশুমানের ষাটহাজার পিতৃব্যের ভস্মীভূত হবার কথা। তাকে ঘোড়াটি ফিরিয়ে নিয়ে যাবার কথা বললেন। কিন্তু অংশুমান সেই ষাটহাজার পিতৃব্যের পারলৌকিক ক্রিয়া-তর্পণ কোথায় সারবেন? সাধারণ জলে তো তাদের মুক্তি অসম্ভব। অংশুমান ফিরে এলেন সগর রাজার কাছে। অশ্ব ফিরে আসায় সগররাজা অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন কিন্তু পুত্রগণের আত্মার কল্যাণে কোনো কাজ হলনা দেখে মনের খুঁতখুঁতুনি থেকেই গেল। স্বর্গ থেকে গঙ্গাধারাকে নামিয়ে না আনলে কি করে তাঁর পুত্রদের আত্মার মুক্তি সম্ভব? ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর ততদিনে কেউ গঙ্গা নামের ঐ সুন্দরী মেয়ের নাগাল পাওয়া তো দূরের কথা, চোখের দেখা দেখেও ফ্যান্টাসাইজ করতেও পারেনি।
কলকাঠি নাড়লেন নাটের গুরু নারায়ণ। গঙ্গা মাঈয়্যা কিছুতেই মর্ত্যে অবতরণ করবেনা ? স্বর্গসুখ ছেড়ে নীচে নামতে সে নারাজ?
ব্রহ্মার হাতে কমন্ডলু থাকত । শিবের থাকত জটা। বিষ্ণু ভাবলেন এই হবে আমার ইউএসপি। মায়ার খেলায় তিনি ওস্তাদ।
সগর রাজবংশের আরেক উত্তরসুরী কোশলরাজ ভগীরথ নারায়ণের আদেশে একহাজার বছর কঠোর তপস্যার পর ব্রহ্মাকে তুষ্ট করতে সমর্থ হন । নারায়ণ কাজে লাগালেন তাকে।
নারায়ণ গেলেন ব্রহ্মার সামনে । যেই না ব্রহ্মা হাতের কমন্ডলুর জল নারায়ণের পাদপদ্মে ঢালা অমনি নারায়ণের পা ধোয়া জল গড়িয়ে পড়ল সহস্রধারা রূপে। নারায়ণ বললেন, ভগীরথ এই হল তোমার গঙ্গাধারা। হাতের শাঁখটি ভগীরথের হাতে দিয়ে বললেন, এই হল প্রকৃষ্ট সময়। গঙ্গাকে এবার ভুলিয়ে ভালিয়ে মর্ত্যে নিয়ে চলো। তুমি শাঁখ বাজাতে বাজাতে আগে চলো আর পেছনে চলুক এই জলধারা।
উদ্ভিনযৌবনা গঙ্গার সিডাকশন মেকানিজমটা একটু ভিন্নস্বাদের। সামনে তার মধ্যবয়সী, সংসারে চেটে যাওয়া মাঝবয়সী হ্যান্ডসাম । সেও বলে আমিও খেলাব তাদের। স্বর্গের সুখ যখন ছেড়েইছি তখন তোমাদেরো কালঘাম ছোটাবো।
ভগীরথ চললেন । পেছনে রূপসী গঙ্গা । কিন্তু নাছোড় গঙ্গা একবার লুকোয় গুহার মধ্যে তো আরেকবার ঢুকে পড়ে গিরিকন্দরে । আবার খলখল করে বয়ে চলে তো আবার নানা অছিলায় হারিয়ে যায় ভগীরথের চোখের সামনে থেকে। পাহাড়ীপথ ভগীরথের শঙ্খধ্বনিতে মুখর হয়। কিন্তু সু‌উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ থেকে কি করে সে লাফিয়ে পড়বে ? বেগবতী স্রোতস্বিনীর আছড়ে পড়া কি আর ধরিত্রী স‌ইতে পারবে? রসাতল হবে সেই চিন্তায় ব্রহ্মা ভগীরথকে শিবের শরণ নিতে বললেন। শিব মাথা পেতে দাঁড়িয়ে নিজের জটায় ধারণ করলেন গঙ্গাকে। পাহাড়ের মাথা থেকে লাফিয়ে পড়লেন গঙ্গা। শিবের জটাজাল ছিন্নভিন্ন করে স্বর্গ প্রবাহিনী গঙ্গার ধারা মর্ত্যে প্রবাহিত হল ।
এইভাবে অসংখ্য বাধা-বিপত্তি সামলিয়ে অবশেষে ভগীরথের দেখানো পথ ধরে গঙ্গা হল দক্ষিণমুখী। সবশেষে ভগীরথের শঙ্খধ্বনি অণুসরণ করতে করতে গঙ্গা গিয়ে সোজা হাজির কপিলমুনির আশ্রমের দিকে। আর বঙ্গের মধ্যে গঙ্গার এই দক্ষিণমুখী শেষ ধারাটির নাম হল ভাগিরথী । সাগরদ্বীপে গঙ্গার জলের স্পর্শে সগরমুণির ষাটহাজার পুত্রের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হলে শান্তি পেল তাদের পারলৌকিক আত্মা। উদ্ধার হয়ে স্বর্গে পাড়ি দিল তারা।
মেয়ের কাজ শেষ। লীলায়িত ছন্দে গঙ্গা ঝাঁপ দিলেন সমুদ্রে। গঙ্গার সাথে সাগরের মিলন হল আর এই স্থান বিখ্যাত হল সাগরসঙ্গম বা গঙ্গাসাগর নামে।
কিন্তু ফাইনালি ভগীরথ-ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরকে ডিচ মেরে গঙ্গা তার দয়িতের সাথে মিলিত হল। সেটাই এ গল্পের ট্র্যাজেডি।

স্বর্গীয় রমণীয় (৩)


মেয়ে যুদ্ধ করে জিতে এয়েচে, মানে দশহাতে অসুর বধ করেচে, দেশ জুড়ে সবাই মেয়েটাকে বাহবা দিতেছে.... মাদুগ্গা কৈলাসে ফিরে গেচেন অনেকদিন হল। দেবতারা বসে সেখানে গোঁফে তা দিতেছেন।
একা মেয়েছেলের কত ক্ষেমতা বাপু, কেষ্টদা অকপটে মেনে নিল।
কেউ বলছে, ধুস্‌ তবুও যদি বুঝতুম একা সামলেছে সব।
ধার করা সব অস্ত্র শস্ত্র পেলে আমারাও অমন দশটা অসুর মারতে পারতি, ইন্দর দাদাবাবুতো কোনো রাখঢাক নেই, বলেই ফেল্ল।
তবে যাই বলো বাপু দুগ্গাটা দেকিয়ে দিল! শিবুদা বৌয়ের প্রশংসায় আরো কয়েক ছিলিম বেশী গাঁজা নিয়েছে ।
এখন কৈলাসে মহিষাসুর বধের দ্বিতীয় ইনিংসের তোড়জোড়। বড়াখানার আয়োজন হচ্ছে। দুর্গার অনারে। তবে অহংকারে পা পড়তেচেনা কারো। যেন তেনারাই যুদ্ধ করে এয়েচেন। তাই দেখে শুনে শিবুদা বললেন তা তোমাদের বৌয়েরা তো সব পাটরাণী। বলি আমার বৌ অসুর মেরেচে তো তোমাদের এত গর্বের কি! এমন ভাবখানা কচ্চো যেন তোমরাই মেরেচো!
ব্রহ্মা সেই শুনে একটা ফন্দী আঁটলেন। ব্রাহ্মণের রূপ ধরে রাজসভায় এসে সকলের সামনে একটা তৃণ মানে কচি দুব্বোঘাসের টুকরো রেখে বললেন, দেখি কত্ত ক্ষেমতা বাপু তোমাদের্? এই তৃনটাকে উড়িয়ে দাওতো যেমন করেই হোক!
পবনদেব এলেন। বললেন্, এ আর এমন কি! কিন্তু শত চেষ্টা করেও পারলেন না ঐ ঘাসের টুকরোকে হটাতে। এরপর অগ্নিদেব এলেন তৃণকে পুড়িয়ে দেবার জন্যে। সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও বিফল হলেন।
তখন ব্রহ্মা স্বয়ং নিজের রূপ ধরে বল্লেন, কি করে পারবে তোমরা? সারাটা জগতকে যিনি ধারণ করে রয়েছেন তিনিই তো মায়া-মমতা-স্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছেন ঐ তৃণটুকুনিকে। অতএব স্বীকার করলে তো ঐ জগদ্ধ্বাত্রীর কত্ত ক্ষেমতা? আর তোমরা কিনা দুর্গার অসুরবধ নিয়ে বুক ফোলাচ্ছ্, গোঁফে তা দিছ, পার্টির আয়োজন কচ্চো যেন তোমরাই অসুরটাকে মেরেচো!!!
অতএব এখন দুর্গা=কালী--জগদ্ধ্বাত্রীর অনারে আরো একবার পার্টি হৌক্! কেষ্টদা বলে উঠলেন!!!

Saturday, December 12, 2015

স্বর্গীয় রমণীয়(২)


স্বর্গীয় রমণীয় – কবিতা ক্লাব (রম্যরচনা-নভেম্বর-২০১৫)

-বলি হচ্ছেটা কি? আমার বৌ ফর্সা হবে না কালো হবে তা নিয়ে কার এত মাথাব্যথা! আমি যদি স্বেচ্ছায় কালোমেয়েকে ঘরে তুলি তাতে কার কি বলার আছে বাপু! কালো আর ধলো বাইরে কেবল, ভেতরে তো সব এক‌ই বাপু! বলি আমার সাথে ছিষ্টি করতে পারলেই তো কেল্লাফতে ! তা নয় সেই কালোমেয়েটা ঘরে আসা অবধি কানের কানকো নাড়িয়ে দিল ! নন্দী, এক ছিলিম কড়া করে গাঁজা সেজে আনতো !
শিবুদা বেশ ঝেঁঝে রয়েছেন। দুধেআলতা পায়ে নতুন বৌটা ঘরে ঢোকেনি তখনো তাই নিয়ে কৈলাসে কানাঘুষো চলছে । কেষ্টদা তো মুখ ফসকে বলেই ফেললেন, "হোক কলরবের" তালিম নিয়েছেন তালেবররা
ইন্দর দাদাবাবু ঠিক এই সময়েই শিবুদার মনোরঞ্জনের জন্য অপ্সরাকে তাঁর কাছে পাঠালেন! 'দিন আগে শিবুদার বলে, না জানি কি অসম্ভবকে তিনি সম্ভব করেছেন তাই ভেটস্বরূপ শিবুদাকে ঘুষ হিসেবে স্বর্গের বার-ড্যান্সার পাঠানো । যে যার কানেকশান দেখায়। শিবুদা কালীকে বিয়ে করে এনে ভাবে কতবড়ো নারীর ঘরণী তিনি। ইন্দরদাদাবাবু অপ্সরাদের পাঠিয়ে দেখাতে চান কত ক্ষেমতা তার। মাঝখান থেকে কালীর নাভিশ্বাস ওঠে ।
শিবুদার আবার ইন্দর দাদাবাবু, কেষ্টদার মত মেয়েমানুষে ছোঁকছোকানি নেই । তিনি বেশ ভয়ে ভয়ে অপ্সরাদের বললেন, দেখো, আমার ঘরে নতুন বৌ এখন। তোমরা বরং তার অতিথি হও ! এই বলে কালীকে অপ্সরাদের সামনেই আদরের সাথে ডাকলেন,
-হে অঞ্জনসদৃশ শ্যামলী, আমার রূপসী কুচকুচে কালী, ওগো বধূ ব্ল্যাক-বিউটি ! ক‌ই ? এসো একটিবার সামনে, দ্যাখো কারা এসেচেন তোমার সাথে আলাপ করতে, তোমাকে নাচগান শোনাতে!
ফর্সা অপ্সরাদের সামনে এরূপ কুরুচিকর সম্বোধনে কালী গেলেন ক্ষেপে। একে নতুন বৌ, তায় আবার রাসভারী, মেজাজী, দাপুটে এক নারী। তাঁর মোটেও সহ্য হলনা।
তিনি মনে মনে বললেন, " কি এত বড় আস্পর্ধা! আমাকে বাইরের নারীর সামনে কালো বলা! আমিও দেখিয়ে দেব আমার প্রকৃত স্বরূপ। মনের দুঃখে গঙ্গায় গিয়ে তপস্যা শুরু করলেন কালী। নিজের গায়ের কৃষ্ণকোষগুলি একে একে পরিত্যাগ করলেন। যেন খোলস ছাড়ছেন তিনি। দ্বিখণ্ডিত ব্যাক্তিত্ত্ব বা স্প্লিট পার্সোনালিটি বলে যাকে। কালো রং অনায়াসে বদলে ফেলে কালী হলেন গৌরী ।
এবার ঝাঁটারূপেণ সংস্থিতা হয়ে গৌরী অপ্সরাদের সম্মুখে এসে হাসিমুখে বললেন,
-এবার বুঝতে পারছো তোমরা? নেশাভাঙ করে, ছাইভস্ম মেখে তোমাদের শিবুদার মাথাটা এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেছে। আমায় বলে কিনা নতুন বৌ! আমার সংসারে কত্ত কাজ আর আমি নাকি এখন নাচ-গান শুনব? তা মেয়েরা, তোমরা আজকাল বুঝি একটু বেশী খাচ্ছো। নাচের ফিগারটাতো নষ্ট করে ফেলেচো দেকচি। আমার বাবার আমল থেকে তো তোমাদের জানি । হেলেন, মিস শেফালি মার্কা ধুবলা পাতলা ছিলে সব! বলি এহেন বপু নিয়ে বালা নাচো কি করে ? তার চেয়ে আগে একটু মেদ ঝরাও, তারপর না হয় এসো কৈলাসে। আমি ফরাস বিছিয়ে, আতর ছড়িয়ে, অম্বুরী তামাক সেজে বসে থাকব তোমাদের জন্যে।
এদিকে অপ্সরাদের সামনে তো তিনি গৌরী ওদিকে আড়ালে অন্তঃপুরে আবার তিনি অভিমানে জর্জরিতা কালী । শিবুদার সেদিন কালরাত্রি। কালীর সাথে সেরাতে ভেট হবার কথা নয়। কিন্তু পান্ডববর্জিত স্বামীর ঘরে শাশুড়ি-ননদের কাঁটাও নেই। অগত্যা সেরাতেই ফর্দা ফাঁস।কিন্তু অন্তঃপুরে বৌকে খুঁজে পেলেননা শিবুদা। বিস্মিত শিবুদা নারদকে সব খুলে বললেন। নারদ একাধারে স্বর্গের গেজেট অন্যধারে রয়টার। খবর সংগ্রহ করতে তার জুড়ি নেই। অচিরেই খবর নিয়ে জানালেন শিবুদার বৌ কালী সুমেরু পর্বতের মাথায় এক দুর্গম স্থানে অভিমানে গোঁসাঘরে । নারদ তো পাঁচা করতে ওস্তাদ । তিনি সাপের গালেও চুমু খান, ব্যঙের গালেও চুমু খান। কালীর কাছে হাজির হয়ে তাঁর গোঁসার কারণ জানতে চাইলেন। কালী বললেন, শিবুদা তাঁর বিহনে কেমন আছেন? নারদ বললেন্, খাসা আছেন। কালীর জন্য তাঁর বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই। তিনি এখন পুনরায় বিয়ে করার জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।
কালী সেই কথা শুনে রেগে আগুণ, তেলে বেগুণ হয়ে ষোড়শী মেয়ের রূপ ধরে এক ছুট্টে শিবুদার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি ভুলে গেলে তোমার প্রতিজ্ঞা? আমায় বিয়ে করে আবারো তুমি বিয়ে করতে চলেছো? সেই কথা শুনে শিবুদা তো মহা খুশি। ভাবলেন নারদকে পাঠিয়ে কাজ হল । কালীকে জড়িয়ে ধরে হামি খেতে খেতে বললেন, আমি যে কে তোমার, তুমি তা বুঝে নাও। আমি চিরদিন তোমারি তো থাকব, তুমি আমার, আমি তোমার....ব্লা, ব্লা, ব্লা । আজ থেকে তোমার এই মহাবিদ্যারূপের নাম দিলাম ভুবনেশ্বরী।