Saturday, August 20, 2016

আবার সে এসেছে ফিরিয়া

চাদ্দিকে যা রম্যের ঘটা, তাই কলম ধরতে ভয় যদি না হাসে পাঠক আমার ? তবুও লিখতে হয়। এই ধরুন মাগ্যির ম্যাগি নিয়ে যা কান্ডটি হল! আমি কোথায় ভাবছিলাম মিডডে মিলে ম্যাগি চালু হল বলে! ম্যাগি তো হল গিয়ে বাচ্ছাদের স্টেপল ফুড এখন। ব্যস্ত গৃহিনী, চাকুরে গৃহিণী, রুগ্ন গৃহিণী, রান্নার মাসীর অনুপস্থিতিতে ল্যাজে গোবরের গৃহিণীর পরম আদরের বন্ধু হল গিয়ে ম্যাগি। স্থলে, জলে, অন্তরীক্ষ্যে, এভারেস্টের মাথা থেকে কন্যাকুমারীকার জলে যেখানে যাবে কাপ্-ও-নুডলসের খাপ কিম্বা ম্যাগির পরিচিত হলদে প্যাকেটটি পেয়ে যাবে। তা না দেখি আমার প্রিয় ম্যাগির নামে কত কেচ্ছা! মোনো সোডিয়াম গ্লুটামেট আছে তাতে, লেড আছে তাতে! আরে থাকুকনা মশাই! কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরোতে পারে! জানেননা? আজ যে রাজা কাল সে ফকির। চিরদিন, কাহারো সমান নাহি যায়! আজ যে সিবিআইয়ের ফাঁদে কাল সিবিআই যে তার ফাঁদে পড়বেনা কে বলতে পারে? এফ এম সি জির দলদাস আমরা কি বাপু অতশত বুঝি? আমাদের যেমন চালাও তেমন চলি। আমরা যন্ত্র, মিডিয়া আমাদের যন্ত্রী। মোদের যেমন নাচাও, মোরা তেমনি নাচি । ধরুণ ম্যাগিকান্ডের কোপ এবার গিয়ে সোজা পড়ল পাড়ার ফুচকার ফ্যাক্টরীতে অথবা আইসক্রিমের এঁদোগলিতে। ফুচকার জলে নাকি মশার লার্ভা থেকে শুরু করে পুকুরের জল পর্যন্ত থাকে। পুকুরের জলে শৌচকর্মের বীজাণুরা দিব্যি হেসে খেলে বেড়ায়। সস্তার আইসক্রিম নাকি ড্রেনের জলে তৈরী হয়। তাতে জলজ্যান্ত স্ট্যাফাইলোকক্কাসরা দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকে দিনের পরদিন আর হিম-সাগরে অবগাহন করে তাদের নাকি মা-ষষ্ঠীর কৃপায় দিব্যি বংশবিস্তার চলতে থাকে। একটু গরমে এলেই ওরা ক্ষমতা দেখায়। গলায় ব্যথা, কাশির অব্যর্থ জীবাণু রূপে রোগসংসারে ওদের খুব নামডাক । ম্যাগিকান্ডে না হয় একটা মাল্টিন্যাশানাল বাঁশ খেল কিন্তু ফুচকায় হাত দিলে কিম্বা ঐ ফুটপাথী আইসক্রিমে হাত দিলে বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। এক ঘা পড়বে ফুচকাওলার ঘাড়ে। এক ঘা পড়বে লোকাল দাদার ঘাড়ে। এক ঘা পড়বে স্থানীয় কাউন্সিলারের ঘাড়ে। আর বাদবাকী পনেরোটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার আগেই সেখানকার যত ডাক্তারবাবুরা আছেন তাঁরাই ব্যাপারটাকে চাপা দিয়ে দেবেন। কারণ? কারণ রোগী বিনা ব্যাবসা নাই, ডাক্তারবাবুর ঘুম নাই। অতএব ফুটপাথী ফুচকা ও আইসক্রিম চলতেই থাকবে। লোকাল দাদা আর কাউন্সিলর সাহেবকে ঐ ডাক্তারবাবুরাই ম্যানেজ করে দেবেন। লোক দেখিয়ে দিনকয়েক ফুচকাওলা অন্য পাড়ায় গিয়ে দাঁড়াবে। আইসক্রিম ওয়ালা দুকুরবেলায় না বেরিয়ে সন্ধ্যের ঝুলে আইসক্রিম বিকোবে আর ড্রেনের জলে, পুকুরের জলে চুন ছড়িয়ে কাউন্সিলার সাহেব মাইক হাতে বলবেন" ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দেওয়া হল সর্বত্র অতএব আজ থেকে পত্রপাঠ মশার লার্ভা, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অন্তর্হিত হল এই এলাকা থেকে।" কানেকানে মাইক সরিয়ে ফুচকাওলাকেও বলে দেওয়া হল, যেমন চলছে চলুক। "তোমরা আমাকে তোলা দাও, আমি তোমাদের ফুচকা বেচতে দেব"। ডাক্তারবাবু মহাখুশিতে তাঁর ছাদের ওপর গভীররাতের নৈশভোজ ডাকলেন। সে যাত্রায় ফুটপাথী ফুচকা আর আইসক্রিম রক্ষে পেল। হোয়াটসএপ থেকে ফেসবুক সর্বত্র ম্যাগি নিয়ে জোকের ছড়াছড়ি। আরে মশাই ম্যাগি তো সলমন খানের চেয়েও বড় সেলেব। ঐটুকুনি হলদে প্যাকেট আর অত্তখানি স্বাদে ভরা, সুবিধেয় ঠাসা একটা মাল! ছোট্ট ছেলেটা স্কুল থেকে এসে বলল, মা! ম্যাগি ছেলে না মেয়ে বলতো? মা আবার "মাগী"র সাথে ম্যাগির নৈকট্য বুঝে উত্তর দিলেন "মেয়ে" ছেলে বলল, "হলনা, ওতো দু'মিনিটে তৈরী হতে পারে, তাই ম্যাগি হল ছেলে, ইয়ে! মাই ফেভারিট ম্যাগি! আমার ম্যাগি চাই-ই, ব্যস! আমিও ছেলে, ম্যাগিও ছেলে" ছেলের বাবা বলল, "আর সত্যি যদি লেড থাকবে তাহলে সারাদেশের ছেলেরা আজকে সলমনের মত মাসল ফুলিয়ে নটরাজ-বন্ডেড লেড, এইচবি" আর মা সেই শুনে বলল, "তাহলে মেয়েরা অত সীসা হজম করে নিশ্চয়‌ই অপ্সরা, এক্সট্রা ডার্ক, ঠিক যেন ব্ল্যাক বিউটি কৃষ্ণকলি!” মোড়ের মাথার চায়ের দোকানে ম্যাগি বিতর্কে সামিল হলেন ভোলাদা আর শিবুদা। ভোলাদা বললেন, "যাই বল আর তাই বলো ম্যাগি একদম বন থেকে বেরোল টিয়ে, সোনার টোপর মাথায় দিয়ে। ভিনিভিডিভিসি করে আজ নুডলস দুনিয়ায় তার মত পপুলার কেউ নেই। আমার মনে হচ্ছে ঐ এম-এন-সি মানে, যারা ম্যাগি তৈরী করে তাদের সাথে ডাক্তারবাবুদের ষড় আছে। নতুন নতুন রোগের সন্ধানে ব্যস্ত থাকেন তারা। হাঁচি-কাশির যুগ শেষ হয়ে ডিপথিরিয়া-টিবির যুগ ফুরোল। এডস-হেপাটাইটিস নিয়েও মানুষ যথেষ্ট সচেতন এখন। তাই নতুন কিছু ভাবনা নিয়ে হাজির হতে হবে । মিলেনিয়ামের পনেরো বছর নতুন কিছুই এগোয়নি আর। কেবল "তারে জমিন পর", "পা", "মাই নেম ইজ খান" অথবা "ফিফটিন পার্ক এভিনিউ" ছাড়া ! অতএব চলো, কুছ করকে দেখানা হ্যায়। জাপানের মিনামাতা উপসাগরে বিষ পড়ায় মাছেদের মৃত্যু ও তা থেকে মানুষের মৃত্যু হয়ে গেল গেল রব উঠেছিল। সেখানেও সীসা ছিল মধ্যমণি অতএব চলো লেড পয়জনিং নিয়ে মাতামাতি কাম আন্দোলন করি আমরা। প্রথমে আমরা ক্ষেপিয়ে বেড়াই ম্যাগি নিয়ে । তারপর ঝড় থেমে গেলে আবালবৃদ্ধবনিতাকে পুছতাছ করে তার লেড পয়জনিং আদৌ হল কিনা দেখি কিছু টেষ্ট করে। তারপর বাজারে এই রোগ নিয়ে কিছুদিন উত্তেজনা চলবে। মিডিয়া বলবে। মানুষ ভয় পাবে। তারপর চারদিকে পাড়ায় পাড়ায় লেড পয়জনিং এক্সপার্ট ডাক্তারবাবুর ক্লিনিক চালু হবে। যেমন হযেচে "ইনফার্টিলিটি এক্সপার্ট', "ওবেসিটি এক্সপার্ট", "এনোরেক্সিয়া এক্সপার্ট" ..তেমনি আরকি!লেড পয়জনিং বা যার গালভরা নাম "প্লাম্বিজম" অথবা আরো বড়সড় নাম "কলিকা পিক্টোরিয়াম" বাবুদের চেম্বারে দেখলে রোগীরাও সচেতন হবে। হাজারো গন্ডা টেষ্টক্লিনিকে নতুন টেষ্ট হবে। নতুন রোগ মানেই নতুন জনকারী। নতুন জনকারী মানেই শোরগোল। অতএব সে যাত্রায় মনে হচ্ছে ম্যাগি পার পেয়ে যাবে। তাই ম্যাগির ভাগ্য নির্ধারণ করবেন মাননীয় ডাক্তারবাবুরা। একটু আধটু লেডও থাকুক। আজিনামোটোর ছোঁয়াও থাকুক। বেঁচে যাক এমএনসি। বেঁচে থাক ম্যাগি। বেঁচে যাক ছেলেবুড়ো ! সার্জেনরা কিন্তু মুষড়ে পড়েছে বড়। ম্যাগি না খেলে বেরিয়াট্রিক সার্জারী বন্ধ হয়ে যাবে। দিব্যি ম্যাগির ফ্যাট হজম করে বাচ্চাগুলোর ওবেসিটি হচ্ছিল, সার্জেনরা বছরে অন্ততঃ দুটো হলেও কেস পাচ্ছিল।" শিবুদা বললেন, "এবার থামবেন ভোলাদা? আমাকে কিছু বলতে দেবেন্?” "দুটো ব্যাপার আছে আমার মনে হয়। সরকার বলচেন, দেশে যে হারে আলুচাষী, গমচাষীরা আত্মহত্যা করছে তার অন্যতম কারণ হল গম, আলু এসব বিক্রি পড়ে যাওয়া। মানুষ ডাল খায়না আর। ডালের দাম বেশি তাই। ভাত-রুটি-ডাল খাওয়া কমে যাচ্ছে তাই সরকারের হঠাত মনে হয়েচে ম্যাগি হল যত নষ্টের গোড়া। মানুষ ম্যাগি বেশি খাচ্ছে তাই ম্যাগির ব্যবসা লাটে ওঠাও। আর সরকারী কোঁদল চাপা দিতে কি ওষুধ লাগে জানেন তো ভোলাদা? শুধু ঠিক জায়গাটায় ঐ কোম্পানী তার দেয় অঙ্কটা মিটিয়ে দিন, এই আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা।" কলেজের এক প্রোফেসরের নামটাই দিয়ে দিলাম "ম্যাগি" কারণ ওনার মুদ্রা দোষ। ওনার বোরিং লেকচারে ব্যতিবস্ত হয়ে আমরা "আর কতক্ষণ" ম্যাম জিগেস করলেই উনি শুধাতেন "টু মিনিটস" ! আমরা ওনার নাম বদলে দিয়ে রাখলাম "ম্যাগি" সেই ব্র্যান্ড আজ বিপর্যস্ত। সেই সুখ আজ অসুখে পরিণত। সেই হলুদ প্যাকেট আজ বিতাড়িত। সলমন খান অত বড় দোষ করে পার পেয়ে গেল আর ম্যাগির নামে যত্ত দোষ! আরে মশাই জ্বরে গা পুড়ে যাওয়া বাচ্চার ম্যাগি খেয়ে অসুখ বেড়ে গেছে বলে তো শুনিনি কখনো। একশো গ্রাম ম্যাগি আধখানা পেঁযাজ আর একটা ডিম দিয়ে দিব্যি কমপ্লিট মিল! আর কুকিং টাইম দুমিনিট। নো হ্যাপা অফ গেটিং গ্যাস আর পেটও ভরবে জেনো, ব্যাস! অতএব বস্তিতেও স্বস্তি। হাইরাইজেও মস্তি। ম্যাগি হল ফুড দুনিয়ায় সেলিব্রিটি। আজ ম্যাগির মধ্যে এমএসজি তাই এত হুজ্জুতি তোমরা করো! তোমরা যে সব বুড়ো খোকা আর কারো দোষ দেখতে নারো! কত লোক কথা দিয়ে কথা রাখেনি তার বেলা? কত ব্ল্যাক মানির হদিশ পাওনা তার বেলা? কত করাপশান "দেবা: ন জানন্তি কুতো মনুষ্যা:”, তার বেলা? কত মামলা সুবিচার পায়না তার বেলা? কত টুপি প্রতিনিয়তঃ আমাদের পরতে হয়, অন্যতম সমাজবন্ধু ডাক্তারবাবুর দ্বারা। তার বেলা? অতএব বন্ধু গুজবে কান দিবেননা। দিন আগত ঐ ! ম্যাগি বেঁচে থাকিবে। তার জনক মিষ্টার নেসলে অত বোকা নন। তিনি জানেন এ দেশে কিভাবে ব্যাওসা পাতি করতে হয়। টু আর ইজ হিউম্যান। একটু সময় দিন কেবল। তাঁর অপত্যকে রক্ষা তিনি‌ই করিবেন, বলাই বাহুল্য।

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ১৪ই আগস্ট ২০১৬ 

Monday, August 8, 2016

একুশে যোগ

"বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো, সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারো" ... রবিঠাকুরের কথা। আর সেইস্থানেই তিনি খুঁজিয়া পাইলেন স্বামীজিকেও। স্বামীজি বলিয়াছিলেন জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, কর্মযোগ এবং রাজযোগের কথা। এবার উত্তিষ্ঠিত, জাগ্রত ভারতবাসী তথা সারা বিশ্বের মানুষ দেখিল চিরন্তন, শাশ্বত ভারতের ব্যায়াম যোগ। শেষমেশ রবিঠাকুর,বিবেকানন্দের আদর্শ মাথায় ল‌ইয়া স্বাস্থ্য‌ই জীবনের মূলমন্ত্র হইল। প্রথমে শৌচাগার তাহারপর ব্যায়ামাগার। অতএব প্রথমে বিয়োগচিন্তা তারপর যোগচিন্তা। না, না যোগের অর্থ জলযোগ নয় কোনোমতেই। প্রথমে স্বাস্থ্য তৈরী করা, তাহার পর "স্বাস্থ‌ই সম্পদ" এই আপ্তবাক্য মাথায় রাখিয়া "লাগো কাজে, কোমর বেঁধে, খুলে দ্যাখো জ্ঞানের চোখ, কোদাল হাতে খাটে যারা, তারাই আসল, ভদ্রলোক" । "ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে" কি না তাহা হইল মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন তবে যোগাভ্যাসের এক্সোথার্মিক বা তাপনিঃসারক বিক্রিয়ার ফলে প্রচুর তাপশক্তি নির্গত হ‌ইবে । যোগাভ্যাসকে একটি তাপনিঃসারক বা এক্সোথার্মিক প্রসেস বলা যাইতেই পারে। ফলস্বরূপ প্রচুর স্নেহ ঝরিবে আকাশে, বাতাসে। চর্বি গলিবে, ঘামের দুর্গন্ধে টেঁকা দায় হইবে। সকল স্নেহ, শ্বেতসার যাইবে ব্যায়ামাগারের নয়ানজুলিতে। উহাকে সাফ করিতে রাজ্যে রাজ্যে কর্মসংস্থান হইবে । নয়ত অচিরেই দেশ আরো গরম হইয়া উঠিবে। কারণ স্নেহ অতি বিষম বস্তু। তাপ নিঃসারক। একেই বিশ্ব উষ্ণায়ণ তায় আবার মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হ‌ইতে ব্যায়ামের দরুণ যে ক্যালরি দহন হইবে তাহা কোথায় যাইবে? দেশের অভ্যন্তরেই ঘুরপাক খাইবে। শুধু দেশ নয় রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্তর্গত দেশগুলিতেও তাপ উদ্বৃত্ত হ‌ইবে। সবকিছু চিন্তা করিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জ বিবেচনা করিয়াছেন, পৃথিবী নামক গ্রহটির অভ্যন্তরে একটি সেন্ট্রালি কনট্রোলড এয়ার কন্ডিশানার বসাইবেন। পৃথিবীর মনুষ্যকুল যোগের সাথে ভোগ করিয়াও বাঁচিবে আর যোগাভ্যাস করিয়া বেঁচেবর্তে দিব্যদৃষ্টি লাভ করিয়া পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করিবে। রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি বৃদ্ধি পাইবে। আমরা আরো "ভালো" করিয়া জীবনযাপন করিব। কলিযুগে মানুষ অভ্যাস করিবে কলিযোগ। সমাজের সর্বস্তরে মানুষ অনুভব করিবে নতুন যোগ। কি জানি কাহার যোগসাজসে যোগাচার্যের এরূপ যোগপ্রীতির বাণী মনুষ্যকুলে সঞ্চারিত হ‌ইল! তবে যোগাচার্যের ব্যায়ামাগারের যোগ-ঊর্মি আমাদের উভয়বঙ্গকেও ভাসাইয়া দিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। আমি বাপু আদার ব্যাপারী। যোগ-বিয়োগের সাথে আমার পরিচয় হ‌ইয়াছিল পাটিগণিতে। ইহা ব্যাতীত এযাবতকাল বহু যোগের সাথে যোগাযোগ হ‌ইয়াছে আমার। যোগদিবস উদ্‌যাপনে আমার ইহার পূর্বে কোনো মাথাব্যথা ছিলনা। কিন্তু যত‌ই বয়স বাড়িতে লাগিল তত‌ই বুঝিলাম যোগ না করিলে জীবনের সবটুকু‌ই বিয়োগফল। অতএব এ ব্যাপারে কারোর বিরুদ্ধে কোনো অনুযোগ বা অভিযোগও না করিয়াই সামিল হ‌ইলাম সমগ্র বিশ্ব সহ আমার দেশ, তোমার দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার সহিত । যোগ না করিলে জীবন হ‌ইতে পিত্জা-বার্গার-মকটেলাদি, রোল-চাউমিন-ফুচকা-মিষ্টান্নাদি জীবন হ‌ইতে বিয়োগ দিতে হ‌ইবে। অতএব "এখন আর দেরী নয়, ধরগো তোরা, হাতে হাতে ধরগো, এবার যোগাসনে বসতে হবে, ন‌ইলে বিপদ হয়গো" যোগবলে তুমি যোগাচার্য আমি যোগমায়া। চলো, করেঙ্গে অ‌উর মরেঙ্গে। ডু অর ডাই। ভারতকে বিশ্বের দরবারে যোগ করিব আমরা। বিয়োগ করিব দ্বেষ, হিংসা। যোগবলে ছড়াইব শান্তির বাণী। অহিংসার বার্তা। হ্রাস পাইবে তোমার-আমার-সকলের মধ্যপ্রদেশ। বৃদ্ধি পাইবে হৃদয়ের উত্তরপ্রদেশ। আর যাহারা অংশ ল‌ইলনা তাহারা অচিরেই অধঃক্ষিপ্ত হ‌ইবে । "সবার পানে যথায় বাহু পসারো, সেইখানেতেই প্রেম জাগিবে আমারো ..." অতএব বাহু পসারিয়া, চক্ষু উন্মিলীত করিয়া বিশ্ববাসীর সহিত গত একুশে জুন আমরাও যুক্ত হ‌ইলাম। প্রেম বিলাইলাম। প্রেম জাগাইলাম। এক্ষণে বিশ্ব যোগদিবসের এই যোগকে আমরা কি যোগ বলিয়া আখ্যা দিব? আমার মতে ইহা স্বামীজির আরেক প্রকার কর্মযোগেরই অন্তর্ভুক্ত যাহাকে "প্রেম যোগ" বলিয়া অভিহিত করা যাইতেই পারে। কিন্তু উহাতে যুবসমাজ চিত্তবৈকল্যের হেতু ক্ষতিগ্রস্ত হ‌ইয়া পড়িতে পারে। যোগ হ‌ইল একপ্রকার সাধনা, আরাধনা, উপাসনা বা তপস্যার ন্যায় একাগ্রচিত্তের ফসল। সেখানে "প্রেম, ভালোবাসা" নৈব নৈব চ। অবশেষে রাজশেখর বসুর উদ্ভাবিত বিল্বকাষ্ঠের ল্যাঙট বৃত্তান্ত জানিতে পারিয়া বিশ্ব যোগ পরিষদ এবং জয় হনুমান একাডেমী সমগ্র বিশ্বের পুরুষগণের জন্য মাথাপিছু একটি করিয়া ঐ কৃচ্ছসাধনার ল্যাঙট অর্ডার দিয়াছেন। এবং অচিরেই কোনো এক পৃষ্ঠপোষক সেই টেন্ডারে সাড়া দিয়া ল্যাঙটের অর্ডার পাইয়াছেন বলিয়া জানিলাম । এবার প্রশ্ন হ‌ইল বিশ্বের যোগীরা ডাকযোগে সুদৃশ্য প্যাকেট সহযোগে ল্যাঙট পাইবে। ল্যাঙট পরিয়া যোগীর শরীরে ব্যথাবিষ বৃদ্ধি পাইবে। দেশবাসীর মনোযোগ সহকারে এহেন যোগাভ্যাসের দাপটে চিকিত্সকদের কিঞ্চিত ভয় হ‌ইতেছিল বটে। রোগীরা ঔষধ-যুক্ত না হ‌ইয়া মুষ্টি যোগ, হঠযোগ করিতেছিল। তাহাতে উহাদের ব্যাওসাপাতি লাটে উঠিতেছিল। বর্তমানে ল্যাঙটকান্ডে উহারা আবারো ফুলিয়া ফাঁপিয়া উঠিবেন, সেটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাস। এবার যোগিনী বা যোগমায়ারা কি পরিবেন? বিশ্ব যোগ পরিষদ বলিল, "কেন? উহারা বল্কল পরিবে, কাঁচুলি পরিবে। মাথার কেশরাজিকে পরিপাটি করিয়া শিরের সু-উচ্চে কবরী বাঁধিবে। ঠিক যেমন আদি-অনাদি ভারতবর্ষের আশ্রমকন্যারা করিতেন" জয় হনুমান দল বলিল " উহাতে যোগভ্রষ্ট হ‌ইবে পুরুষগণ। মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটিবে। যোগের বদলে বিয়োগ হ‌ইবে।" অগত্যা বিশ্ব যোগ পরিষদ ধার্য করিল নতুন উপায়। ঘোড়দৌড়ের মাঠে ঘোড়াদের চিত্তচাঞ্চল্য রুখিবার জন্য চোখের যেরূপ ঢাকনা ব্যবহৃত হয় তেমনটি ধারণ করিয়া পুরুষেরা যোগাভ্যাস করিবে। সেযাত্রায় যোগাভ্যাসে কোনো চিত্তচাঞ্চল্যের আভাসমাত্র পাওয়া যাইবেনা এই তাহাদের বিশ্বাস।

উত্তরবঙ্গ সংবাদ  ৩১শে জুলাই-২০১৬